Science Invention & The Holy Quran


"ফাবি আইয়্যি আ'লা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান"

আলহামদুলিল্লাহ, আজ বিজ্ঞান এতোকিছু আবিষ্কার করেছে বলেই মানুষ জানতে পারছে কুরআন সত্যের বানী। নাহলে জানাই যেত না যে কোরআনে আগেভাগেই এতকিছু বলা আছে...!


  • ১. বিগ ব্যাং(Big Bang) থিওরি প্রমাণিত হয় ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞানী পেনেজিয়াসওয়িলসন এর মাধ্যমে, যার জন্য তারা ১৯৭৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। 

সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াত-এ কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 

আল্লাহতালা বলেন-

“অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল;অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং জীবন্ত সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আল আম্বিয়া, ২১:৩০)


  • ২. আজ থেকে ১০০ বছর আগেও মানুষ মনে করত যে মহাবিশ্ব স্থির। ১৯২৯ সালে জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল প্রমাণ করেন যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

আল্লাহতালা বলেন-

“আমি নিজ ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই এর সম্প্রসারণকারী।” (সূরা যারিয়াত-৪৭)


  • ৩. Fingerprint (আঙ্গুলের ছাপ): সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে; মানুষের আঙ্গুলের ছাপ (Fingerprint) দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যা ১৮৯১ সালের আগের মানুষের অজানা ছিল।

আল্লাহতালা বলেন-

"মানুষ কি মনে করে যে, আমি কখনই তার অস্থিসমূহ একত্র করব না? আমি তার আংগুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।" (সূরা কিয়ামাহঃ ৩,৪)


  • ৪. ১৪০০ বছর আগের এক পৃথিবীতে ভ্রূণের বেড়ে ওঠার স্তর গুলো নিয়ে কুরআন বিস্তর আলোচনা করে। যা 200 বছর আগেও মানুষের অজানা ছিল !

আল্লাহতালা বলেন-

“আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি, পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট রক্তে, অতঃপর জমাট রক্তকে পরিণত করি পিণ্ডে (Like chewed lump) এবং পিণ্ডকে (Like chewed lump) পরিণত করি অস্থিপিঞ্জরে (bone), অতঃপর অস্থিপিঞ্জরকে মাংসপেশী (muscle) দ্বারা ঢেকে দিই, অবশেষে তাকে রূপ দান করি। সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।”(সূরা আল মু’মিনুন, ২৩, ১২-১৬)


  • ৫. পূর্বে মানুষ মনে করত যে চাঁদের আলো তার নিজের। বিজ্ঞান গত শতাব্দীতে নিশ্চিত হয়েছে যে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই বরং তা সূর্য থেকে পাওয়া । সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগে এই কথা বলা হয়েছে। 

আল্লাহ তালা বলেন,

"কত মহান তিনি যিনি নভোমণ্ডলে সৃষ্টি করেছেন বিরাট আকারের নক্ষত্রসমূহ এবং উহাতে স্থাপন করিয়াছেন প্রদীপ (সূর্য) এবং চাঁদ;যার রয়েছে ধার করা আলো।" (সূরা ফুরক্বানঃ ৬১)


  • ৬. বিজ্ঞান প্রায় ৪০-৫০ বছর আগেও জানতোনা যে নক্ষত্রগুলোতেও ঘূর্ণন ও কক্ষপথ রয়েছে।

কুরআনে আল্লাহতালা বলেন,

“তিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ ও সূর্য। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”

(সূরা আম্বিয়া -৩৩)


  • ৭. মহাবিশ্বে ছায়াপথ (galaxy) তৈরীর আগে আকাশী পদার্থগুলো গরম গ্যাস (smoke) জাতীয় জিনিস যেমন উত্তপ্ত হাইড্রোজেন হিলিয়াম ছিল। যা মানুষ জেনেছে ১০০ বছরও হয়নি। 

কুরআনে আল্লাহতালা বলেন,

“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল গরম ধূঁম্রকুঞ্জ (smoke) অবস্থায়, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।" ( সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১)


  • ৮. কিছু দিন আগে ভ্রূণ বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছে যে একটি শিশু যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার। ভাবা যায়?

আল্লাহতালা বলেন,

"অতঃপর তাকে আমি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছি।" (সূরা দাহর ৭৬:২)

"তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।" (সূরা নাহল ১৬:৭৮)


  • ৯. পাহাড়-পর্বত আমাদের কি কাজে লাগে? 
    প্রখ্যাত geologist ডঃ ফ্রাস্ক প্রেস তার বিশ্ববিখ্যাত বই ‘Earth’ এ বলেন ‘’পাহাড়- পর্বত ভূপৃষ্টের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ও তা পৃথিবীকে কম্পন ও নড়া থেকে রক্ষা করে’।

১৪০০ বছর আগে কোরআনে আল্লাহতালা বলেন,

"আমি পৃথিবীতে পাহাড়- পর্বত সৃষ্টি করেছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী কাঁপতে না পারে ।" (সূরা নাহলঃ ১৫)


  • ১০.  সূর্য থেকে ক্ষতিকর রশ্মি ও শক্তিশালী বিকিরন (solar flare) প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে চায় এবং প্রবেশ করলে প্রাণী জগতের অস্তিত্ব বিনাশ হয়ে যেত। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর এই রশ্মিগুলোকে ছেঁকে বিশুদ্ধ আলো আমাদের কাছে পাঠায়। তাছাড়াও দিনরাতে উল্কাপিণ্ডের (meteorite) অনবরত বর্ষণ পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এই বিষয়গুলো মানুষ কখন জেনেছে? hardly ১০০ বছর আগে।

আল্লাহতালা বলেন,

"আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।" (সূরা আম্বিয়াঃ ৩২)


  • ১১. সৈনিক বা কর্মী মৌমাছি স্ত্রী না পুরুষ?
    শেক্সপিয়ারের Henry the fourth’ নাটকে কর্মী মৌমাছিকে পুরুষ উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞান পরে প্রমাণ করে যে কর্মী মৌমাছি স্ত্রী মৌমাছি। ১৯৭৩ সালে, ‘Von Frisch’ মৌমাছির আচরণ ও যোগযোগের উপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। । কোরআন ১৪০০ বছর আগে কর্মী মৌমাছিদের স্ত্রী মৌমাছি বলেছে।

আল্লাহতালা বলেন-

“আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে (কুলি ওয়া ফাসরুকি = স্ত্রী মৌমাছি) আদেশ দিলেন;পাহাড় - পর্বতের গায়ে,গাছে এবং উঁচু চালে ঘর তৈরি কর। এরপর সকল প্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথ সমূহে চল।” (সূরা আন নহল-৬৮-৬৯)


  • ১২. বিগত ৪.৫ বিলিয়ন বছর ব্যাপী রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সূর্যের দেহে তাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এক সময়ে এর অবসান ঘটবে এবং তখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সূর্যের নিষ্প্রভ হওয়া কেয়ামতের লক্ষণ।

সূর্যের অস্থায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেনঃ

"যখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।" (সূরা তাকবীর-১)


  • ১৩. মাটির নিচে যে পানি আছে তা কোথায় থেকে আসে বা তার উৎস কি; তা পূর্বে মানুষের জানা ছিলনা। মাত্র ২০০ -৩০০ বছর আগে মানুষ জানতে পারে যে মাটির নিচের পানির উৎস হল বৃষ্টির পানি যা শোষিত (soaked) হয়ে মাটির নিচে জমা হয় এবং যাকে infiltration বা water seepage বলে । কোরআন ১৪০০ বছর আগে বলে যে মাটির নিচের পানির উৎস হল বৃষ্টির পানি।

আল্লাহ তা’লা বলেন,

"আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম।" (সূরা আল মুমিনূন -১৮)


  • ১৪. ধারণা করা হয় যে,অনুভূতি ও বেদনার উপলব্ধি মস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্রমাণ করেছে যে,চামড়ার মধ্যে বেদনা অনুভবকারী উপাদান রয়েছে যাকে Pain receptor বলা হয়। Pain receptor ছাড়া ব্যক্তি ব্যথা অনুভব করতে পারে না। কোরআন ১৪০০ বছর আগে এই কথা বলেছে।

আল্লাহ তা’লা বলেন,

“এতে সন্দেহ নেই যে,আমার নির্দশন সমূহের প্রতি যে সব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করবো। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আবার আযাবের আস্বাদন করতে থাকে নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।” (সূরা আননিসা -৫৬)

থাইল্যাণ্ডের চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের Anatomy বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাগাতাত তিজাসেন (Professor Tagata Tagasone) চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদানের উপর দীর্ঘ দিন ব্যাপী গবেষণা করেছেন। 

প্রথমদিকে, তিনি বিশ্বাস করেননি যে,১৪০০ বছর আগে কোরআনে এবিষয়ে কথা বলেছে। তিনি কোরআনের এই আয়াতের অনুবাদ পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি কোরআনের আয়াতের এরূপ বৈজ্ঞানিক যথার্থতায় এত বেশী মুগ্ধ হন যে, রিয়াদে অনুষ্ঠিত কোরআন ও সুন্নার বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক ৮ম সম্মেলনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন।

“আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।”


  • ১৫. ডেমোক্রিটাস (Democritus) ও তার পরবর্তী সময়ের লোকেরা মনে করত সর্বাধিক ক্ষুদ্র একক হচ্ছে, অণু, আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে অণুকে বিভক্ত করা যায়। অণুকে বিভক্ত করার বিষয়টি বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার।

কোরআনে আল্লাহ তা’লা প্রায় ১৪০০ বছর আগে বলেনঃ

"অবিশ্বাসীরা বলে,আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন, কেন আসবেনা? আমার প্রতিপালকের শপথ, অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। আসমান ও যমীনে অণু পরিমাণ কিংবা তা থেকে ক্ষুদ্র ও বড় কোন কিছুই তার অগোচরে নয়। সমস্তই আছে সুষ্পষ্ট কিতাবে।”(সূরা সাবা-৩)


আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তায়ালা আমাদের সকলকে নেক বুঝ বোঝার তৌফিক দান করুন এবং নেক হেদায়াত দান করুন।