ফজরের নামাজের সময় হল ভোরের শুরু থেকে সূর্যোদয়ের ঠিক আগে পর্যন্ত, এমন সময়কাল যা প্রায় দেড় ঘন্টা স্থায়ী হয়।
একজন আন্তরিক, নিষ্ঠাবান এবং ধার্মিক উপাসককে ফজরের নামাজ পড়তে বিছানা থেকে ওঠা কষ্টকর মনে হয় না। যাদের ঈমান দুর্বল, তাদের ফজরের নামাজ ভারী মনে হয়।
নবী করিম (সা)) তাঁর হাদিসে এই বিষয়টি নির্দেশ করেছিলেন; তিনি বলেন,
মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে ভারী নামাজ হলো ইশার নামাজ এবং ফজরের নামাজ। যদি তারা জানত যে তাদের মধ্যে কী (পুরস্কার) আছে, তাহলে তারা তাদের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত।
ইহসান তোরাবি ফজরের নামাজের প্রতীক কি সুন্দর ছবি এঁকেছেন।
ফজরের নামাজ আদায়ে সহযোগিতার জন্য দশটি সহায়ক পন্থা-
১. ফজরের নামাজের জন্য আপনি যদি মন থেকে দৃঢ় ইচ্ছা করেন, তবে কখনোই রাত জাগবেন না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন যাতে করে একদিকে আপনার ঘুমও পূর্ণ হয় আবার অন্যদিকে যথাসময়ে ফজরের জন্য উঠতে পারেন। রাসূল (সা.) এশার নামাজের পরপরই ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিজ্ঞানও এই অভ্যাসের যথার্থতার প্রমাণ প্রকাশ করেছে।
২. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওজু করে নিন। যদি আপনি পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যান, তবে ফেরেশতারা আপনার ঘুম থেকে জাগার আগ পর্যন্ত আপনার জন্য দোয়া করতে থাকবে।
৩. ডান কাত হয়ে ঘুমাতে যান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাতে যাওয়ার সময় ডান কাত হয়ে ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ঘুমাতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণে ঘুমের জন্য শোওয়ার এই অবস্থা একদিকে যেমন ঘুমের জন্য সহায়ক, অন্যদিকে ফজরের সময় যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্যও কার্যকর।
৪. আল্লাহর কাছে আন্তরিকতার সাথে বেশি বেশি দোয়া করুন, যাতে আল্লাহ আপনাকে যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায়ে সামর্থ্য ও শক্তিদান করেন। আল্লাহর কাছে যদি আপনি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে পারেন, তবে আল্লাহও আপনার প্রার্থনাকে কবুল করবেন।
৫. ঘুমাতে যাওয়ার সময় কুরআন থেকে কিছু আয়াত তেলওয়াত করে নিন। বিশেষ করে সূরা সাজদাহ, সূরা মুলক, সূরা ইয়াসিন, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
৬. একাধিক অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন। আওয়াজ যত বেশি হবে, ততই ভালো! অ্যালার্ম ঘড়ি হাতের কাছে বা বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখুন, যাতে করে আপনাকে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ঘড়ি বন্ধ করতে হয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পাশাপাশি আপনার নিদ্রার ভাব কাটার জন্যও সহায়ক হবে।
৭. পরিবারের সদস্যদের বলুন, যদি তারা উঠতে পারে তবে ডেকে দেওয়ার জন্য। তেমনিভাবে আপনিও উঠতে পারলে তাদের ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য ডেকে দিন।
৮. ফজরের নামাজ আদায়ে যথা সময়ে ওঠার জন্য বন্ধুদের কাছে সাহায্য চেতে পারেন। যদি তারা উঠতে পারে, তবে তারা যেন ফোন করার মাধ্যমে আপনাকে ফজরের জন্য ডেকে দেয়। তেমনিও আপনি আপনার বন্ধুদের ফজরের নামাজ আদায়ে সাহায্য করুন।
৯. নিজেকে পুরস্কার দান করুন। যদি আপনি ফজরের সময় উঠতে পারেন, তবে আপনার প্রিয় ফ্লেভারের কফি বা চকলেট দিয়ে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।
১০. বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ঘুম দেড় ঘন্টার একটি চক্র অনুসরণ করে। সুতরাং, আপনি যদি দেড় ঘন্টা বা এর গুনিতক সময় যথা তিন ঘন্টা, সাড়ে চার ঘন্টা বা ছয় ঘন্টা ঘুমান, তবে আপনি ক্লান্তিহীনভাবে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন। তা না হলে আপনি যত সময়ই ঘুমান না কেন, আপনার ক্লান্তি দূর হবেনা। সুতরাং, আপনি যদি রাত বারোটায় ঘুমাতে যান এবং ফজরের সময় যদি পাঁচটার দিকে হয়, তবে সাড়ে চারটার দিকে অ্যালার্ম দিন। ঘুমের চক্র পরিপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ক্লান্তিহীন ভাবে আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ফজর সহ সকল ওয়াক্তের নামাজ যথাযথ সময়ে আদায় করার তৌফিক দান করুন।
Source- Saudi Gazette
0 Comments